স্বদেশ ডেস্ক:
চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। সার্বিক তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই। তার পরও হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলার মানুষজন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বাধ্য না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। শীতের কারণে কাজ না পাওয়া বা কাজে যেতে না পারায় আর্থিক দুর্ভোগে পড়েছে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজন। এ ছাড়া এ শীতে বোরো বীজতলাও বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ শীত থেকে বাঁচতে সবাই ছুটছে শীতের কাপড় জোগাড়ে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে খুব কম জেলাতেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে অভিযোগ করেছেন গরিব লোকজন। এ দিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মানুষের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, সদি ও কাশির প্রকোপ বেড়েছে। বয়স্ক, শিশু ও নারী রোগী ভিড় জমাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পরিবেশে যে তাপমাত্রা আছে তা শুষে নিচ্ছে কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা। চার দিন থেকে সূর্যের দেখা নেই বলে পরিবেশ গরম হতে পারছে না। ফলে একমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের অন্যান্য একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে। এই সাত বিভাগে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, গতকাল শনিবার থেকে বাংলাদেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই। তবে উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এটাও আরো দূরে চলে যাবে। তবে তা আগামী ২৪ ঘণ্টার আগে হচ্ছে না। উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয় নামক প্রক্রিয়াটি সরে গেলেই বাংলাদেশের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়া দূর হয়ে যাবে। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামীকাল সোমবার থেকে আবহাওয়া উষ্ণ হতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুরে ১০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ছিল টেকনাফে ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশের সবচেয়ে শীতল স্থানগুলোর মধ্যে তেঁতুলিয়া, শ্রীমঙ্গল, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রাজশাহী, ঈশ্বরদীর মতো স্থানে তাপমাত্রা গতকাল ১০.৪ থেকে ১১.৯ ডিগ্রির মধ্যে ছিল। শীতল স্থানগুলোতে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, কাল থেকে কুয়াশাও অনেকটা কেটে যাবে। ফলে সূর্য দেখা যাবে এবং তাপমাত্রা বাড়বে।
এ দিকে একটি সহনীয় আবহাওয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে প্রচণ্ড শীত পড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো রোগগুলো। এগুলো হয়ে থাকে কয়েকটি ভাইরাসের কারণে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, প্রধানত সাতটি থেকে আটটি ভাইরাসের কারণে শীতকালে সর্দি-কাশি, জ্বর হয়ে থাকে। এসব ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই। সচেতনতার মাধ্যমে এসব ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ঠাণ্ডায় কয়েক ধরনের ভাইরাস হঠাৎ করেই কার্যকর হয়ে থাকে। এ সময় কিছু ব্যবস্থা নিলেই ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, সর্দি ও কাশি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তিনি বলেন, যাদের সহজেই ঠাণ্ডা ধরে যায় তাদের এই শীতে সব সময় গরম পানি পানের অভ্যাস করতে হবে। লেবুর চা অথবা গরম পানিতে লেবু চা পান করতে পারেন। আবার গরম পানি দিয়ে গোসল করলে সর্দি-কাশির অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তিনি বলেন, শুধু শরীরটাকে গরম রাখতে হবে। শীতের এই ভাইরাসগুলো ঠাণ্ডার মধ্যে কার্যকর হয়। গরমে এগুলো টিকতে পারে না। এ সময় বাইরে চলাফেরা করলে ভালোভাবে শরীরকে ঢেকে নিতে হবে যেন ঠাণ্ডা বাতাস না লাগে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি বলেন, হাঁচি এলে মুখে রুমাল চেপে ধরে হাঁচি দেয়া উচিত। তা হলে হাঁচির মাধ্যমে ভাইরাস দূরে ছড়িয়ে পড়বে না এবং অন্যকে সংক্রমিত করবে না।
গতকাল শনিবার শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরের মেডিসিন বিভাগের গিয়ে দেখা গেছে সেখানে অনেক ভিড়। জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে আসছেন মানুষ। শিশুদের সংখ্যা বেশি। অনেকের মধ্যে হাঁপানি দেখা দিয়েছে। কাউকে দেখা গেল খুব ঘন ঘন হাঁচি দিতে। কিন্তু কারো মুখে মাস্ক ছিল না অথবা কেউ রুমাল চেপে ধরে হাঁচি দিচ্ছে না। আবার রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের আউটডোরে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক হাঁপানির রোগী। বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলাদের সংখ্যা বেশি।
বগুড়া অফিস জানায়, চার দিন ধরে বগুড়াসহ উত্তর জনপদে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অব্যাহত রয়েছে। ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে শীত জেঁকে বসেছে। এতে ছিন্নমূল মানুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা জবুথবু হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার সকাল থেকে বগুড়ায় প্রচণ্ড বাতাস বইছে। এতে দিনমজুর, রাস্তার পাশের খুদে ব্যবসায়ী, রিকশাচালকসহ গরিব লোকজন বেশি কষ্টে পড়েছেন। তাদের বেশির ভাগই গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে তাপমাত্রা ১৫-১৯ ডিগ্রি থাকলেও সন্ধ্যার পর তা ১০-১২ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে।
চিতলমারী (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের চিতলমারীতে শৈত্যপ্রবাহে সাধারণ মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে এখানে সূর্যের দেখা মেলেনি। কনকনে ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। সেই সাথে শীত নিবারণের জন্য মানুষ ছুটছে গরম কাপড়ের দোকানে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী এ সুযোগে অধিক দামে গরম কাপড়, লেপ-তোষক ও কম্বল বিক্রি করছেন। কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে। বাজারে লোকজনের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের স্থবিরতা। গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতার্ত অসহায় মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণের জোর দাবি জানিয়েছেন। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মারুফুল আলাম জানান, সরকারিভাবে তিন হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ভোলাহাটে শীত জেঁকে বসায় অসুস্থ হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কয়েক দিনের বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ভোলাহাটে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আলম ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়েছে।
যশোর অফিস জানায়, যশোরে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুরেও দেখা মেলেনি সূর্যের। এতে অচল হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনজীবন। কেউ কোনো কাজকর্মে যেতে পারছে না। ঘন কুয়াশায় বিঘিœত হচ্ছে যানচলাচল। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীর ভিড়ও বেড়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনি¤œ ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে। কৃষক ইনছার আলী বলেন, প্রচণ্ড শীতে বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে। শীতে সব থেকে বেশি কষ্টে পাচ্ছে খেটেখাওয়া দিনমজুররা। প্রচণ্ড শীতে একান্ত বাধ্য না হলে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
রংপুর অফিস জানায়, গতকাল শনিবারও সূর্যের দেখা মেলেনি রংপুর অঞ্চলে। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ কাজে বেরোতে পারছে না। তারা খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছে। শীতবস্ত্রের জন্য ছিন্নমূল মানুষ হাহাকার করছে। প্রচণ্ড শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গত ৭২ ঘণ্টায় এক অন্তঃসত্ত্বাসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। মুমূর্ষু দু’জনকে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: সোহানুর রহমান শুভ জানান, শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধদের মধ্যে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর সাদেকুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০) মারা গেছেন। আরো দু’জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরা হলেন নীলফামারীর আরিফা (৭) লালমনিরহাটের পাটগ্রামের রসুলপুরের জয়নব বেওয়া (৬৫)।
রংপুরের জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা এ টি এম আখতারুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যেই জেলার সব উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় ৪৭ হাজার ২০০টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো শীতবস্ত্রের বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হবে।
মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, পৌষের শেষ সপ্তাহে শীতে কাঁপছে গোটা মেহেরপুর জেলা। ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জেলাবাসী। শনিবার সকাল ৮টায় মেহেরপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিল আট দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি; বরং গত কয়েক দিনের তুলনায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে গোটা মেহেরপুর। এ শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষেরা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কর্মক্ষেত্রে যেতে না পারায় তাদের আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে। এ দিকে খাদ্য সঙ্কট ও তীব্র শীতের কারণে মেহেরপুর শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছোটাছুটি করছে একদল কালোমুখো হনুমান। খাদ্যের সন্ধানে হনুমানের দল বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যাচ্ছে।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, শীত জেঁকে বসায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়ার সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলা ভার হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড শীত ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এ দিকে শীত বেড়ে যাওয়ায় বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুত ও জমি চাষাবাদ করতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন ছিন্নমুল মানুষদের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করেছেন।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে ও কনকনে ঠাণ্ডায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটেখাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষজন। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীঘেঁষা চরাঞ্চলের লোকজন। এসব চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষজন পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। দুপুর পর্যন্ত তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিরা জানিয়েছেন সরকারিভাবে যে কম্বল দেয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রমতে গতকাল শনিবার নীলফামারীর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে শনিবার সারা দিনে দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। ফলে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে গেছে। গতকাল ফরিদপুরের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফরিদপুরে এটিই এ মওসুমে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা।
শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে শহরের বস্তি এলাকার অধিবাসী ও চর এলাকার বাসিন্দারা, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরে এবং শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে শীতের তীব্রতায় কর্মহীন হয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষজন। ফরিদপুর জিলা স্কুল ও ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল ছিল চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিশু ও তাদের অভিভাবকদের চরম বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়।
ফরিদপুর জেলা ত্রাণকর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ৮১টি ইউনিয়ন ও ছয়টি পৌরসভায় ৪৬০টি করে সরকারি অনুদান কম্বল এসেছে। আমরা সেগুলো ৯টি উপজেলাতে বিতরণ শুরু করেছি। এ ছাড়া জরুরি বরাদ্দ হিসেবে আরো ৯ হাজার ১০০ কম্বল পেয়েছি।
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়েছে শীতের দাপট। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল শনিবার পর্যন্ত উপজেলার কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল গোটা উপজেলা। চলছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এতে কষ্ট বেড়ে গেছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের। ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। অন্য দিকে শীতের তীব্রতায় থেমে গেছে কৃষিকাজও। এ অবস্থায় বাজারে ও ফুটপাথের দোকানগুলোতে শীতের কাপড়ের ক্রেতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার সাথে তীব্র শীতে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে শিশু বৃদ্ধসহ হতদরিদ্র মানুষ। শৈত্যপ্রবাহের কারণে সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। এবারে হঠাৎ করেই বেশ কয়েক দিন শৈতপ্রবাহের কারণে দিনমজুরসহ হতদরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষেরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আকস্মিক এই শৈতপ্রবাহ একটু উষ্ণতার খোঁজে উপজেলাবাসী তাই ছুটছে গরম কাপড়গুলোর দোকানে। অভিজাত বিপণিগুলোতে বিত্তবানরা ও মধ্যবিত্তরা ভিড় করলেও দিনমজুরসহ হতদরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষেরা ভিড় জমিয়েছেন ফুটপাথের দোকানগুলোতে।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, তিন দিন ধরে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে উত্তরের হিমেল হাওয়া, দিন-রাত ঘনকুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতের কারণে ব্যবসায় বাণিজ্য, লেখাপড়া ও কৃষিকাজে ব্যাপক অসুবিধা দেখা দিয়েছে। এলাকায় ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। প্রচণ্ড শীতে নি¤œআয়ের মানুষ ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
লালপুর (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের লালপুরে শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। গত শনিবার ঘন কুয়াশার কারণে দিনের অনেকটা সময়েও পরিবহনগুলোকে আলো জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। প্রতিকূল আবহাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি কাশির মতো সমস্যায় ভুগছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফরমান আলী জানান, লালপুরসহ ওই এলাকায় রোববারও সূর্যের মুখ দেখা যাবে না। সারা দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও রাতে আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তাপমাত্রা আরো হ্রাস পেতে পারে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি শিশির কণা, ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া এবং কনকনে ঠাণ্ডায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের অসহায় পরিবারগুলো কাবু হয়ে গেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল পরিবারগুলো অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঠাণ্ডায় কর্মজীবী ও শ্রর্মজীবী শ্রেণীর মানুষজন কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সোলেমান আলী জানান, এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৯০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বিতরণ করা হবে।